স্টাফ রিপোর্টার, ঝাড়গ্রাম: পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল জঙ্গলমহল৷ তাই আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামে গিয়ে আদিবাসীদের মুখ্যমন্ত্রী কিছুটা অনুরোধের সুরে বললেন, ‘‘ভুল বুঝবেন না৷ অপপ্রচারে কান দেবেন না৷ জঙ্গলকন্যা’কে আমাকে হারাতে দেবেন না৷’’ পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফলাফলের পর প্রথমবার ঝাড়গ্রামের মাটিতে পা রেখেই কল্পতরু মুখ্যমন্ত্রী৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিলান্যাস থেকে বাসের উদ্বোধন করলেন তিনি৷ প্রতিশ্রুতি দিলেন জঙ্গলমহলে আরও স্কুল সহ একগুচ্ছ কাজের৷ বললেন, ‘‘পিছিয়ে পড়া মানুষদের স্বার্থে অসুবিধে হলেও রাজ্য সরকার উন্নয়নের কাজ চালিয়ে যাবে৷’’
বুধবার ঝাড়গ্রামে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ঘিরে মানুষের উন্মাদনা কম ছিল না৷ সবাই অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর ঢালাও উন্নয়ন প্রকল্প ঘোণা শোনার জন্য৷ সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘বিশ্ববিদ্যালয় হলে আর আদিবাসী ছেলে মেয়েদের পড়তে বাইরে যেতে হবে না৷’’ তাঁর আমলেই অলচিকি ভাষার স্বীকৃতির কথা তুলে ধরে মমতা বলেন, ‘‘ঝাড়গ্রামে আরও দু’টো অলচিকি মাধ্যমের স্কুল তৈরি করা হবে৷ এছাড়া আদিবাসী অধ্যুষিত পুরুলিয়া, বাঁকুড়াতেও তৈরি করা হবে আরও বেশ কয়েকটি স্কুল৷’’ কিন্তু অলচিকি ভাষায় স্কুলে পড়াতে বাড়তি শিক্ষকের প্রয়োজন৷ বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে মমতা জানান, ‘‘ অলচিকি ভাষার শিক্ষক নিয়োগ করবে সরকার৷ এগিয়ে আসতে হবে আধিবাসীদেরকেই৷’’
আরও পড়ুন: Breaking: বামেদের আইন অমান্য ঘিরে চড়ছে পারদ
পঞ্চায়েতে খারাপ ফলের ময়না তদন্তে নেমে ধরা পড়ে, তৃণমূলের স্থানীয় নেতৃত্বের ঔদ্ধত্য, উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা ঠিক মতো গরীব মানুষগুলোর কাছে না পৌঁছানোই জঙ্গল মহলে শাসক দলের হারের অন্যতম কারণ৷ সেই ভুল শোধরাতে এদিন সভায় মুখ্যমন্ত্রী দলীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘‘জঙ্গলমহলের প্রতিটি আদিবাসীর বাড়িতে গিয়ে সুবিধা অসুবিধার খোঁজ খবর নিতে হবে৷ সমস্যা থাকলে তা বিভিন্নস্তরে আলোচনা করে মিটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে৷’’ এক্ষেত্রে গাফিলতি ধরা পড়লে রেয়াত করা হবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷
সরকারি উন্নয়নের প্রতিশ্রুতির মধ্যেই এদিন শুধু আটকে ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী৷ বিভেদের রাজনীতির প্রসঙ্গ টেনে একদিকে যেমন সাবধান করে দেন জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের, তেমনই কটাক্ষ করেন বিজেপিকে৷ ভোটে জিততে গেরুয়া বাহিনী টাকা বিলোচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলেন, ‘‘টাকা ছড়িয়ে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে বিজেপি৷ প্ররোচনায় পা দেবেন না৷’’
পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফলাফলেই প্রমাণ আধিবাসীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা বেড়েছে বিজেপির৷ এতে রাজ্যের ক্ষতি হচ্ছে বলে স্মরণ করিয়ে দিয়ে ভরা সভায় বিজেপিকে নিশানা করে বলেন, ‘‘প্রতিবেশী ঝাড়খণ্ড থেকে লোক এনে ঝাড়গ্রামকে অশান্ত করা চেষ্টা করা হচ্ছে৷ খেয়াল রাখবেন বহিরাগতদের নজরে রাখবেন৷’’ বাংলায় সংকীর্ণ, সাম্প্রদায়িক বিভেদের রাজনীতির জায়গা নেই বলেও এদিন মোদী-শাহ জুটিকে কার্যত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেন মমতা৷
আরও পড়ুন: NRC ইস্যু: অসমবাসীদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিবাদ সভা বাংলার বুদ্ধিজীবীদের
জঙ্গল মহল তৃণমূল আমলে অনেক ভালো আছে৷ আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবসে বাম জমানার প্রসঙ্গ তুলে সেই তুলনাই এদিন টানলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ বলতে ভুললেন না জঙ্গলমহল তাঁর নয়নের মণি৷ রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, এদিনের সভায় কার্যত পঞ্চায়েত ভোটে খারাপ ফলের ড্যামেজ কন্ট্রোল করলেন তৃণমূল নেত্রী৷ তবে লোকসভায় এর প্রভাব পড়বে কিনা তার প্রমাণ মিলবে ফলাফলেই৷
লাল-নীল-গেরুয়া...! 'রঙ' ছাড়া সংবাদ খুঁজে পাওয়া কঠিন। কোন খবরটা 'খাচ্ছে'? সেটাই কি শেষ কথা? নাকি আসল সত্যিটার নাম 'সংবাদ'!
'ব্রেকিং' আর প্রাইম টাইমের পিছনে দৌড়তে গিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকেছে সত্যিকারের সাংবাদিকতার। অর্থ আর চোখ রাঙানিতে হাত বাঁধা সাংবাদিকদের।
কিন্তু, গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভে 'রঙ' লাগানোয় বিশ্বাসী নই আমরা। আর মৃত্যুশয্যা থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেন আপনারাই। সোশ্যালের ওয়াল জুড়ে বিনামূল্যে পাওয়া খবরে 'ফেক' তকমা জুড়ে যাচ্ছে না তো? আসলে পৃথিবীতে কোনও কিছুই 'ফ্রি' নয়। তাই, আপনার দেওয়া একটি টাকাও অক্সিজেন জোগাতে পারে। স্বতন্ত্র সাংবাদিকতার স্বার্থে আপনার স্বল্প অনুদানও মূল্যবান। পাশে থাকুন।.